Sep 22, 2024

সুষম খাদ্য: সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি ও বিস্তারিত পুষ্টি গাইডলাইন

Expert Nutrition Advice: Dr. Mohibulla Mollah

Balanced Diet Chart Dr Mohibulla Mollah

"স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল"—আর এই সুস্বাস্থ্যের ভিত্তি হলো সুষম খাদ্য বা Balanced Diet। আমরা অনেকেই মনে করি দামী খাবার, বিদেশি ফলমূল বা সাপ্লিমেন্ট মানেই পুষ্টিকর খাবার, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। হাতের কাছের সহজলভ্য শাকসবজি, মাছ ও ডাল দিয়েই শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব। সুষম খাদ্য শরীরকে শক্তি যোগায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। আজকের ব্লগে আমরা জানব সুষম খাদ্য কী এবং কীভাবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা বৈজ্ঞানিক উপায়ে সাজাবেন।

সুষম খাদ্য কী? (What is a Balanced Diet?)

সহজ কথায়, যে খাদ্যে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৬টি পুষ্টি উপাদান—শর্করা, আমিষ, স্নেহ বা চর্বি, ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং পানি সঠিক অনুপাতে থাকে, তাকেই সুষম খাদ্য বলে। কোনো একটি উপাদান বাদ দিলে শরীর অপুষ্টিতে ভুগতে পারে, আবার অতিরিক্ত খেলেও স্থূলতাসহ নানা রোগ হতে পারে।

খাদ্যের ৬টি উপাদান ও তাদের বিস্তারিত কাজ

উপাদান প্রধান কাজ সেরা উৎস
শর্করা (Carbohydrates) শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায় এবং মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, আলু, ওটস, ভুট্টা, মিষ্টি আলু।
আমিষ (Protein) শরীরের পেশী গঠন, ক্ষয়পূরণ এবং এনজাইম ও হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছ, ছোট মাছ, মুরগির মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম, শিমের বিচি।
স্নেহ (Fats) তাপ শক্তি উৎপাদন করে, ভিটামিন (A, D, E, K) শোষণে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল, সরিষার তেল, ঘি (পরিমিত), মাছের তেল, অ্যাভোকাডো।
ভিটামিন ও খনিজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হাড় ও দাঁত মজবুত করে, রক্তশূন্যতা রোধ করে। সবুজ ও রঙিন শাকসবজি (পালং, পুঁই, গাজর), লেবু জাতীয় ফল, ছোট মাছ (কাঁটা সহ)।
পানি শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ।

আদর্শ খাবারের প্লেট (The Healthy Eating Plate Method)

ক্যালোরি মেপে খাওয়া অনেকের জন্য কঠিন। তাই হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের পুষ্টিবিদরা 'প্লেট মেথড' আবিষ্কার করেছেন যা মেনে চলা খুব সহজ। দুপুরের বা রাতের খাবারের প্লেটটি নিচের নিয়মে সাজান:

  • ৫০% (অর্ধেক): প্লেটের অর্ধেক অংশ বিভিন্ন রঙের শাকসবজি এবং সালাদ দিয়ে পূর্ণ করুন। এতে ক্যালোরি কম থাকে কিন্তু ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবার প্রচুর থাকে যা পেট ভরিয়ে রাখে।
  • ২৫% (এক চতুর্থাংশ): শর্করা জাতীয় খাবার। চেষ্টা করুন লাল চালের ভাত বা লাল আটার রুটি খেতে। এগুলোতে ফাইবার বা আঁশ বেশি থাকে, যা হজমে সাহায্য করে এবং রক্তে সুগার ধীরে বাড়ায়।
  • ২৫% (এক চতুর্থাংশ): প্রোটিন বা আমিষ। মাছ, মুরগির মাংস (চামড়া ছাড়া), ডিম বা ডাল রাখুন। প্রসেসড মিট (যেমন সসেজ, নাগেটস) এড়িয়ে চলুন।

যেসব খাবার বা পুষ্টি উপাদান এড়িয়ে চলবেন

সুস্থ থাকতে হলে কিছু খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে বা খুব কম খেতে হবে:

  • অতিরিক্ত চিনি: কোল্ড ড্রিংকস, কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টি—এগুলো 'ফাঁকা ক্যালোরি' (Empty Calories) যোগায় যা ওজন বাড়ায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তৈরি করে।
  • ট্রান্স ফ্যাট (Trans Fat): বনস্পতি, মার্জারিন, ফাস্ট ফুড এবং রাস্তার ভাজা-পোড়া খাবারে ক্ষতিকর চর্বি থাকে যা হার্টের জন্য মারাত্মক।
  • অতিরিক্ত লবণ: পাতে কাঁচা লবণ খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ। রান্নায় লবণের ব্যবহার কমান।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার: চিপস, বিস্কুট, ক্যানড ফুডে প্রচুর প্রিজারভেটিভ ও সোডিয়াম থাকে যা কিডনির ক্ষতি করে।

সুস্থ থাকার ৫টি গোল্ডেন রুলস

১. সকালের নাস্তা বাদ দেবেন না: সকালের নাস্তা শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। ওটস, ডিম, ফল বা রুটি দিয়ে দিন শুরু করুন। নাস্তা বাদ দিলে দুপুরে বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।

২. পর্যাপ্ত পানি পান: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস (২-৩ লিটার) পানি পান করুন। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং ত্বক ভালো রাখে।

৩. খাবার ধীরে চিবিয়ে খান: দ্রুত খেলে হজমে সমস্যা হয় এবং মস্তিষ্ক পেট ভরার সংকেত দেরিতে পায়, ফলে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। সময় নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খাবার গ্রহণ করুন।

৪. মৌসুমী ফল খান: দামী বিদেশি ফলের চেয়ে দেশি পেয়ারা, আমলকী, বাতাবি লেবু, বরই বা কলায় পুষ্টিগুণ অনেক বেশি এবং তা ফরমালিন মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৫. রাতের খাবার আগে খান: ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন। এতে হজম ভালো হয়, এসিডিটি কমে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না।